ব্যাংকে চাকরি করা হালাল নাকি হারাম—এটি মুসলিম সমাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী, সুদ (রিবা) গ্রহণ ও প্রদান করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। সুদী লেনদেনের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করা, যেমন প্রচলিত ব্যাংক, হারাম হিসেবে বিবেচিত হয়। কারণ এতে সুদের প্রচলন ও প্রসারে সহায়তা করা হয়, যা ইসলামে নিষিদ্ধ। ব্যাংকে চাকরি হারাম কেন?
তবে, ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সুদের পরিবর্তে মুদারাবা, মুশারাকা, ইজারা ইত্যাদি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, যা ইসলামী অর্থনীতির নীতিমালা অনুযায়ী বৈধ। তাই, ইসলামী ব্যাংকে চাকরি করা হালাল বলে গণ্য করা হয়, যদি সেই ব্যাংক সত্যিই ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী পরিচালিত হয়।
বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার ড. জাকির নায়েক এবং মিজানুর রহমান আজহারি উভয়েই ইসলামী ব্যাংকে চাকরি করার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা উল্লেখ করেছেন যে, প্রচলিত সুদী ব্যাংকে চাকরি করা থেকে বিরত থেকে ইসলামী ব্যাংকে কাজ করা উচিত।
তবে, ইসলামী ব্যাংক নির্বাচন করার সময় নিশ্চিত হতে হবে যে, ব্যাংকটি সত্যিই ইসলামী নীতিমালা অনুসরণ করছে। কারণ কিছু ব্যাংক শুধুমাত্র নামেই ইসলামী, কিন্তু কার্যক্রমে নয়।
সুতরাং, ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী পরিচালিত ব্যাংকে চাকরি করা হালাল, তবে প্রচলিত সুদী ব্যাংকে চাকরি করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
সুদ দেওয়া সম্পর্কে হাদিস
প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সুদের সত্তর প্রকার গুনাহ রয়েছে। আর এর নিম্নটি হলো নিজ মায়ের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার সমপর্যায়ের গুনাহ।’ (মুসতাদরেকে হাকেম, আন-নিহায়া ফি গারিবিল হাদিস)।
ব্যাংকে চাকরি হারাম কেন?
যে ব্যাংক সুদের কারবারের সাথে সম্পৃক্ত নাই, তাদের আমরা হালাল হিসেবে ধরে নিতে পারি। তবে আমরা সবাই কম বেশি জানি যে ব্যাংক গুলোর মূল ভিত্তি হলো সুদের কারবার। আর সুদের কারবারের সাথে জরিত যেকোনো কিছুই হারাম। তাই ব্যাংকের চাকরিকে সচরাচর হারাম বলা হয়। তবে এখানে কি কোনো হালাল ব্যাংক নাই? আসুন তা জেনে নেই।
ব্যাংকে চাকরি কখন হালাল?
বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকগুলো অন্তত সমাজে এটি ছড়িয়ে দিতে সমর্থ হচ্ছে যে সুদ হারাম। তারা তাদের বোর্ড গুলো পরিচালনা করছে শরিয়া বোর্ড দিয়ে, যারা মনিটর করে ব্যাংকিং ব্যাবস্থা ইসলামী উপায়ে চলছে কিনা।
ব্যাংকে চাকরি হালাল না হারাম মিজানুর রহমান
বর্তমান সময়ের একজন জনপ্রিয় বক্তা মিজানুর রহমান আজহারি ব্যাংকের ব্যাপারে লোকেদের সাজেশন দিয়ে থাকেন যে, তারা যেন নিজেদের অন্য ব্যাংক বাদ দিয়ে ইসলামী ব্যাংক গুলোর সাথে সম্পৃক্ত করে নেয়। এতে করে বুঝা যায় যে তিনিও অন্যান্য সুদি ব্যাংকের চাকরি হালাল হবে না, এই ব্যাপারে একমত। আরো জানতে নিচের ভিডিওটি দেখুন।

ব্যাংকে চাকরি নিয়ে জাকির নায়েক
ডঃ জাকির নায়েক, তিনিও ইসলামী ব্যাংক গুলোতে কাজ করার ব্যাপারে সাজেশন দিয়ে থাকেন। এ সম্পর্কে জানতে নিচের ভিডিওটি দেখুন।

বাংলাদেশের কোন কোন ব্যাংকে চাকরি করা জায়েজ
বিভিন্ন আলেমদের মত এমন যে, যেহেতু বাংলাদেশে বেশির ভাগ ব্যাংক সুদ ভিত্তিক, তাই সরকারি বেসরকারি বা বানিজ্যিক ব্যাংক গুলো হালাল হবে না। তবে ইসলামী ব্যাংক অনেক আংশে নিজেদের সুদ মুক্ত রাখার চেষ্টা করে। তাই যদি কোনো অলটারনেটিভ না থাকে তবে ইসলামী ব্যাংক গুলোতে চাকরি করা যেতে পারে।
সুদ খাওয়া হারাম। আল্লাহ তাআলা সুদ খাওয়াকে শুধু হারাম ঘোষণাই করেননি, সুদের সাথে জড়িত ব্যক্তির অবস্থান কেমন তা উপমাসহ পবিত্র কোরআনুল কারিমে উল্লেখ করেছেন। কোরাআনে একাধিক আয়াতে সুদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
#১. الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لاَ يَقُومُونَ إِلاَّ كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُواْ إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا وَأَحَلَّ اللّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا فَمَن جَاءهُ مَوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّهِ فَانتَهَىَ فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللّهِ وَمَنْ عَادَ فَأُوْلَـئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
‘যারা সুদ খায়, তারা কেয়ামতের দিন দণ্ডায়মান হবে, যেভাবে দণ্ডায়মান হয় ওই ব্যক্তি; যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছে, ক্রয়-বিক্রয়ও তো সুদ নেয়ারই মতো! অথচ আল্লাহ তাআলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। এরপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, আগে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই জাহান্নামে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৭৫)

