টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করার ভয়াবহতা সম্পর্কে ইসলাম কী বলে? অনেকেই অজান্তে এই অভ্যাস চালিয়ে যাচ্ছেন, অথচ কুরআন ও সহীহ হাদীসে টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা অহংকারের প্রতীক হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। কেন ইসলাম এ কাজ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছে? টাখনুর নিচে কাপড় পরা কি গুনাহের অন্তর্ভুক্ত? বিস্তারিত জানুন এবং ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে এর সতর্কবার্তা পড়ুন
অধিকাংশ জায়গার পরিবেশ অনৈসলামিক হওয়ায় ছোট থেকে বড়, অশিক্ষিত থেকে উচ্চ শিক্ষিত পর্যন্ত এই পাপটি অনায়াসেই করে থাকেন। তারা এটিকে তেমন কিছুই মনে করেন না। তবে কেউ যদি তাকে এ বিষয়ে উপদেশ দেন, তাহলে তাকে বিভিন্ন ধরনের কথা বলে উড়িয়ে দেন। অনেকে বলে, এটি করলে ঠ্যাঙা ঠ্যাঙা লাগে। অনেকে বলে, তুমি এখনো সেকেলে বা আগের যুগের মানুষ হয়ে থেকে গেলে, আধুনিকতার কিছুই বুঝো না। আবার অনেকে এটিকে হেয়ভাবে দেখে। জানেন কি? সেই ছোট পাপটি কি? জি, কমবেশি সবারই জানা। সেটি হলো পুরুষ মানুষের টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা, হতে পারে সেটা প্যান্ট, পায়জামা, জোব্বা বা যেকোনো পোশাক। যারা টাখনুর উপরে কাপড় পরিধান করে আধুনিক যুগের কিছু মানুষ তাদের হেয় প্রতিপন্ন করে।
প্রিয় ভাই! আপনি একজন মুসলিম হিসেবে আপনার প্রথম কাজ পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত জামাআতের সাথে আদায় করা। যার অবাধ্যতার ভয়াবহতা অনেক কঠিন।১ আপনাকে যখন মসজিদে কাতারবন্দী অবস্থায় দেখি যে, সকল প্রকার ভেদাভেদ দূর করে সবাই একই কাতারে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছেন, তখন হৃদয়ে প্রশান্তি অনুভব করি।
কিন্তু পরক্ষণেই যখন দেখি যে, আপনি বা আপনার মতো শিক্ষিত মানুষগুলো ছালাত শেষ করে মসজিদ হতে বের হয়ে, কেউবা মসজিদের ভিতরেই প্যান্ট বা পায়জামা টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে দেয়, তখন সেই বুকভরা আনন্দটা ম্লান হয়ে আফসোসে বুক ফেঁটে যায়!
প্রিয় মুসলিম ভাই! ছালাতে ওয়াদা করলাম কী, আর এখন করছিটা কী? ছালাত শেষ হতে না হতেই ইয়াহূদী-খ্রিষ্টানদের অনুসরণ শুরু করে দিলাম। আপনি কখনো ভয়াবহতা সম্পর্কে চিন্তা করেছেন কি? আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
‘যারা আল্লাহর নামে কৃত অঙ্গীকার ও শপথসমূহ সামান্য মূল্যে বিক্রয় করে, আখেরাতে তাদের কোনো অংশে নেই। আর তাদের সাথে ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না। তাদের প্রতি দৃষ্টি দিবেন না, তাদেরকে (পাপ থেকে) পবিত্র করবেন না আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’ (আলে ইমরান, ৩/৭৭)।

চলুন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুখ থেকে শুনে নিই।
যেই স্টাইলে পোশাক পরাকে আপনি আধুনিকতা মনে করছেন নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এর ভয়াবহতা উল্লেখ করলেন, তখন আবূ যার বললেন, তারা কারা? নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এরা হলো— (ক) যে ব্যক্তি টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পরে, (খ) যে ব্যক্তি নিজের পণ্য বেশি বিক্রয় করার নিমিত্তে মিথ্যা কসম করে এবং (গ) যে ব্যক্তি দান করার পর খোঁটা দেয়।২
প্রিয় ভাই! চিন্তা করে দেখুন তো, আল্লাহ পৃথিবী সৃষ্টি করার সময় ১০০ রহমত সৃষ্টি করেছেন। তন্মধ্যে একটি দয়া পুরো সৃষ্টিজগতের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছেন। বাকি ৯৯টি দয়া তিনি নিজের কাছে রেখেছেন। এটা দিয়ে তিনি বিচারের মাঠে তার বান্দাদের ক্ষমা করবেন।৩ যার একেকটা দয়ার পরিধি হচ্ছে আসমান-যমীন সমতুল্য।৪ এরপরও যদি বিচারের মাঠে আল্লাহ সামান্য (!) টাখনুর নিচে কাপড় পরার কারণে তার দিকে দয়ার দৃষ্টিতে না তাকান! তাহলে বলেন, এ ব্যক্তি কত বড় হতভাগা! অথচ এই পাপের কারণে রোজ হাশরে আপনাকে আমাকে কঠিন ভয়াবহ জাহান্নামে যেতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘সেদিন যালেম তার হস্তদ্বয় কামড়াতে কামড়াতে বলবে, হায়! যদি আমি রাসূলের সাথে সৎপথ গ্রহণ করতাম, হায়! আমার দুর্ভোগ! যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম’ (আল-ফুরক্বান, ২৫/২৭-২৮)।
কোথায় হবে তার অবস্থান? একটিবারও কি ভেবে দেখেছেন? অথচ আপনি এটাকে খুব হালকাভাবে দেখেন। একবার টাখনুর নিচ থেকে টাখনুর উপরে কাপড় উঠাতে শতবার চিন্তা করতে হয়। বন্ধুবান্ধব কী বলবে! মানুষ বলবে শিক্ষিত হয়ে আজও সেকেলে হয়ে আছো?
দেখুন, আপনি বন্ধুবান্ধব আর বড় বড় শিক্ষিত, আত্মীয়স্বজনের কথা চিন্তা করছেন? অথচ এরা কেউ ক্বিয়ামতের মাঠে আপনার উপকারে আসবে না। কেউ আপনাকে সহযোগিতা করবে না। সবাই আপনাকে দেখে পরিচয় গোপন করে পালিয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেছেন,
‘সেদিন মানুষ পলায়ন করবে তার ভাই হতে, তার মাতা ও পিতা হতে, তার স্ত্রী ও সন্তান হতে। সেদিন তাদের প্রত্যেকের এমন কঠিন অবস্থা হবে, যা তাকে সম্পূর্ণ ব্যস্ত রাখবে’ (আবাসা, ৮০/৩৪-৩৭)।
প্যান্ট, লুঙ্গি, পায়জামা, জামা ও পাগড়ি সবগুলোর ক্ষেত্রে একই বিধান তথা ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দিকে তাকাবেন না। সালেম ইবনু আব্দুল্লাহ তার পিতা হতে বর্ণনা করে বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লুঙ্গি, জামা ও পাগড়ি ঝুলিয়ে পরার ব্যাপারে বলেন, ‘যে ব্যক্তি অহংকারবশত উপরের কোনো একটি পোশাক ঝুলিয়ে পরিধান করবে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দিকে তাকাবেন না’।৫ অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লুঙ্গি সম্পর্কে যা বলেছেন, জামা সম্পর্কেও তাই বলেছেন।৬ আপনি মনে করছেন, হাদীছে যেহেতু ‘অহংকার’-এর কথা বলা হয়েছে। আর আমি তো অহংকার করে টাখনুর নিচে কাপড় পরছি না। আমরা এমনিতেই পরে থাকি!
রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লুঙ্গি, জামা ও পাগড়ি ঝুলিয়ে পরার ব্যাপারে বলেন, ‘যে ব্যক্তি অহংকারবশত উপরের কোনো একটি পোশাক ঝুলিয়ে পরিধান করবে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দিকে তাকাবেন না’।৫
জি, প্রিয় ভাই! বাহ্যিক দৃষ্টিতে হয়তোবা আপনার কথা ঠিক আছে। কিন্তু আপনার এই যুক্তিই হলো খোঁড়া। এই যুক্তির সুযোগও ইসলামে রাখা হয়নি। কেননা ইসলামের বিধিবিধান অবজ্ঞা করা ও প্রবৃত্তির অনুসরণ করাই মূলত অহংকার। কিন্তু আপনি এখনো বুঝতে পারেননি যে, টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পরা মানেই অহংকার করা।৭ এজন্য মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তুমি গর্ব করে পৃথিবীতে বিচরণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ দাম্ভিক, অহংকারীকে পছন্দ করেন না’ (লুক্বমান, ৩১/১৮)। তাইতো রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো এক সময়ে এক ব্যক্তি অহংকার করে টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করত। তাই তাকে যমীনে ধসিয়ে দেওয়া হয়েছে। ক্বিয়ামত পর্যন্ত সে যমীনের মধ্যে ধসতে থাকবে’।৮
এখানে আরও একটি ভয়াবহতা হলো— ‘যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তখন এক ব্যক্তি বললেন, কেউ তো পছন্দ করে যে, তার পোশাক ভালো হোক, তার জুতা সুন্দর হোক, এটাও কি অহংকার? তিনি বললেন, আল্লাহ নিজে সুন্দর এবং তিনি সুন্দরকে পছন্দ করেন। অহংকার হলো, হক্বকে অহংকার করে পরিত্যাগ করা এবং মানুষকে হীন ও তুচ্ছ মনে করা’।৯ এজন্য কোনো মুসলিম পুরুষের জন্য টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পরা সর্বাবস্থায় হারাম।
টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারীর শেষ ঠিকানা জাহান্নাম
প্রিয় ভাই আমার! এখনো মাঝেমাঝে লক্ষ করি যে, কোনো নোংরা, ময়লা বা কাদাযুক্ত পানি পার হলে আপনি ঠিকই প্যান্ট-পায়জামা টাখনুর উপরে উঠিয়ে ভাঁজ করে নেন। বুঝে নিন, আপনি পানি ও কাদাকে ভয় করে এ কাজ করেছেন, আল্লাহকে ভয় করে নয়। জেনে রাখুন, যে সকল ব্যক্তি টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পরে, তাদের শেষ পরিণাম খুবই ভয়াবহ। তাদের শেষ ঠিকানা হবে জাহান্নাম। এ মর্মে আপনার আমার দয়ার নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কাপড় টাখনুর নিচে যে পরিমাণ যাবে, সে পরিমাণ জাহান্নামে যাবে। একথা তিনি তিনবার বলেছেন’।১০
প্রিয় ভাই আমার! ইতোমধ্যে হয়তো আপনি চিন্তা করে ফেলেছেন যে, ‘টাখনুর নিচের অংশ জাহান্নামে যাবে’ বাকি অংশ তো আর যাবে না, তাহলে সমস্যা কী? এখনো আপনি কিছুই বুঝতে পারেননি। এটি বুঝতে হলে একটি উদাহরণ লক্ষ করুন। ধরুন, আপনি বিদ্যুৎ বোর্ডের সকেটের দুই ছিদ্রে আঙুল দিয়েছেন। বলেন তো এখন কি শুধু আপনার আঙুলেই শক লাগবে নাকি পুরো শরীরে শক লাগবে? আশা করছি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে আপনাকে দীর্ঘ চিন্তা করতে হবে না। তবে আমি শুধু একটি উদাহরণ দিলাম মাত্র। যা বাস্তবতায় অনেক কঠিন। এজন্য নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার পর্যন্ত বলতেই থাকলেন। অথচ আমরা এটাকে গুরুত্ব দিতে চাই না। তবে এটি বুঝতে আপনার সামনে আরেকটি হাদীছ উল্লেখ করছি, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘জাহান্নামবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে কম আযাব হবে ঐ লোকের, যাকে আগুনের ফিতাসহ একজোড়া জুতা পরানো হবে। তাতে তার মগজ এমনিভাবে ফুটতে থাকবে, যেমনভাবে তামার পাত্রে পানি ফুটতে থাকে। সে ধারণা করবে, তার চেয়ে কঠিন শাস্তি আর কেউ ভোগ করছে না। অথচ সে হবে সবচেয়ে কম ও সহজ শাস্তিপ্রাপ্ত লোক’।১১
উপরন্তু উলামায়ে কেরাম বলেছেন যে, এখানে শরীরের যেই অংশে আল্লাহর নাফরমানী করা হয়েছে, সেটা উল্লেখ করে পুরো শরীর উদ্দেশ্য নেওয়া হয়েছে।১২
ছালাতে টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারী থেকে আল্লাহ দায়িত্বমুক্ত
টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারীকে মহান আল্লাহ ভালোবাসেন না। তাকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখেন। ঐ ব্যক্তির ছালাত ত্রুটিপূর্ণ। ইবনু মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি ছালাত অবস্থায় স্বীয় কাপড় টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরবে, তবে মহান আল্লাহ তাকে ক্ষমা করা বা জাহান্নাম থেকে রক্ষা করা, কোনোটাই করবেন না’।১৩
বুঝা গেল, কোনো ব্যক্তি ছালাত অবস্থায়ও যদি টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পরে, তাহলে মহান আল্লাহর দায়িত্ব তার উপর থেকে উঠে যায়। আর এ অবস্থায় সে মারা গেলে তাকে জান্নাতে দেওয়ার দায়িত্ব আল্লাহ নিবেন না। বিধায় এমন জঘন্য স্বভাব পরিহার করা জরুরী।
প্রিয় ভাই! আপনার সাথে আমার একটু জরুরী কথা হলো, আপনি ছালাতে যাওয়ার আগে টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করেছিলেন। এখন যখন ছালাতে যাচ্ছেন, তখন কাপড় উঠিয়ে নিলেন, এটা কেন? এ অবস্থায়ও তিনি দেখেন বলেই তো রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছালাতে কাপড় গুটাতে নিষেধ করেছেন।১৪ তাহলে এখন সমাধান কী? জি, সমাধান হলো আপনার প্যান্ট-পায়জামা টাখনুর উপরে ধরে কেটে নিতে হবে।
একজন পুরুষ কতটুকু কাপড় ঝুলিয়ে পরতে পারবে?
একজন পুরুষ মানুষ স্বীয় পরিধেয় কাপড় কতটুকু ঝুলিয়ে পরতে পারবে, তাও ইসলামে বলে দেওয়া হয়েছে। হুযায়ফা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার অথবা তাঁর নিজের পায়ের নলার মাংসপেশির নিচের অংশে ধরে বললেন, ‘এ পর্যন্ত হলো লুঙ্গি পরার স্থান। তা যদি মানতে না চাও, আরও নিচে পরো। তারপর তুমি যদি মানতে না চাও, তাহলে আরও নিচে পরো। তাও যদি মানতে না চাও, তবে জেনে রেখো টাখনুর নিচে লুঙ্গি পরার অধিকার তোমার নেই’।১৫ ‘লুঙ্গি, পায়জামা ইত্যাদি পায়ের নলার মধ্যবর্তী স্থান পর্যন্ত থাকা উচিত, যেখানে মাংসপেশি অবস্থিত। যদি তা পছন্দ না হয়, তবে আরও কিছু নিচে পরতে পারো। যদি আরও নামাতে চাও তাহলে আরও কিছু নিচে নামাতে পারো। আর যদি তাও পছন্দ না করো, তবে মনে রেখো! টাখনুর নিচে নামানোর অধিকার কারও নেই’।১৬
একজন পুরুষ তার পরিধেয় কাপড় সর্বনিম্ন টাখনু পর্যন্ত ঝুলিয়ে পরতে পারবে। টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরার কোনো সুযোগ নেই। সর্বাবস্থায় তাকে টাখনুর উপরে উঠিয়ে রাখতে হবে। তা না হলে সে ইসলামে ঘোষিত হারাম কর্মে জড়িয়ে পড়বে। তবে বেখেয়ালে কোনো সময় কাপড় টাখনুর নিচে নেমে গেলে আর পরক্ষণে উঠিয়ে নিলে কোনো গুনাহ হবে না।১৭
মহিলারা কাপড় কতটুকু ঝুলিয়ে পরবে?
একজন মুসলিম মহিলা তাদের পরিধেয় বস্ত্র কতটুকু ঝুলিয়ে পরবে, তাও বলে দেওয়া হয়েছে। কোনো বিষয়ে ইসলামে অস্পষ্টতা রাখা হয়নি। উম্মে সালামা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘মেয়েরা স্বীয় কাপড় কতটুকু ঝুলিয়ে পরবে? উত্তরে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, ‘নারীরা অর্ধ হাত ঝুলিয়ে পরিধান করবে। আমি বললাম, এতে তো পা উন্মুক্ত হয়ে যাবে। তিনি বললেন, তাহলে সে একহাত পরিমাণ নিচে ঝুলিয়ে রাখবে; তার চেয়ে বেশি নয়’।১৮
প্রিয় বোন! এখন আপনার প্রশ্ন হবে যে, তাহলে তো পোশাকের নিচের অংশে নাপাকি লেগে যাবে। জি, এরও সমাধান আছে। এক মহিলা জিজ্ঞেস করলেন, আমাদের মসজিদে যাওয়ার রাস্তাটি আবর্জনাপূর্ণ। সুতরাং বৃষ্টি হলে আমরা কী করব? তিনি বললেন, এর পরের রাস্তাটা কি এর চাইতে ভালো নয়? তখন মহিলাটি বললেন, হ্যাঁ, ভালো। তিনি বললেন, তাহলে এটা ওটার পরিপূরক। (অর্থাৎ এ রাস্তার ময়লা ঐ ভালো রাস্তায় দূর করে দিবে)’।১৯
উপরের হাদীছ থেকে বুঝা গেল যে, মুসলিম মহিলাদের কাপড় পদতালু পর্যন্ত ঝুলিয়ে পরতে হবে। কেননা চলাফেরা করার সময় যেন তাদের পা প্রকাশিত না হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে মুসলিম মহিলাগণ ঠিক সেভাবেই কাপড় পরতেন। তাদের কাপড় মাটি হেঁচড়িয়ে চলত। যার দরুন অনেক সময় রাস্তার আবর্জনা লেগে যেত, যা হাদীছে স্পষ্ট বুঝা যায়। সাথে সাথে এটা প্রমাণিত হয় যে, তাদের কাপড় টাখনুর নিচ পর্যন্ত ঝুলে থাকত। তারা পদতালু বরাবর কাপড় পরিধান করতেন। বিধায় মুসলিম মহিলাদের উচিত পদতালু পর্যন্ত কাপড়ে আবৃত হয়ে চলাফেরা করা।
সুধী পাঠক! বর্তমানে অধিকাংশ পুরুষ টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পরিধান করে থাকে। প্যান্ট-পায়জামা ঝুলিয়ে পরে এমনকি অনেকে লুঙ্গিও টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরে। আরও পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, অনেকে জুব্বা টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরে বেড়ায়। অথচ এ সকল বিষয় অপরাধের দিক দিয়ে সমান। যারা প্যান্ট পরে, তাদের কেউ এমন আছে- যারা ফ্যাশন করে টাখনুর উপরে কাপড় রাখে। আর কিছু আছে আল্লাহকে ভয় করে টাখনুর উপরে রাখে। আর অধিকাংশ টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরে। তবে এই অধিকাংশ মানুষের টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পরা দেখলে মনে হয় টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পরা ফরয। তাই এরা প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
পুরুষের নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত মূল সতর। যা ঢেকে রাখা ফরযের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু কিছু মানুষ নাভি উন্মুক্ত করে টাখনু ঢাকা শুরু করেছে। আর মেয়েদের টাখনুর নিচ পর্যন্ত কাপড় পরিধান করতে বলা হয়েছে। সেখানে তারা অনেকে টাখনুর উপরে কাপড় পরিধান করছে। নারী-পুরুষ উভয়েই ইসলামের বিরুদ্ধাচারণে লিপ্ত রয়েছে; এরা অভিশপ্ত।২০
পরিশেষে একটি হাদীছ বলে আলোচনা শেষ করছি। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের পিছনে রয়েছে ধৈর্যের যুগ। সে সময় যে ব্যক্তি সুন্নাতকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে থাকবে, সে তোমাদের সময়ের ৫০ জন শহীদের মযার্দা পাবে’।২১
অতএব, যেকোনো বিধানকে খুঁটিনাটি বলে অবজ্ঞা করা যাবে না। বরং সেগুলো পালনে বাহ্যিকভাবে যেমন নানাবিধ উপকার রয়েছে, তেমনি অঢেল নেকীও রয়েছে। বর্তমান যুগের প্রত্যেক আমলের পাবন্দ ব্যক্তির জন্যই এই সুসংবাদ।
আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন এবং উক্ত গুনাহসহ সব ধরনের গুনাহ হতে বেঁচে থাকার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!
১. ছহীহ বুখারী, হা/৬৪৪; মিশকাত, হা/১০৫৩।
২. ছহীহ মুসলিম, হা/১০৬; আবূ দাঊদ, হা/৪০৮৭; তিরমিযী, হা/১২১১।
৩. ছহীহ বুখারী, হা/৬০০০; ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৫২।
৪. ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৫৩।
৫. আবূ দাঊদ, হা/৪০৯৪; নাসাঈ, হা/৫৩৩৪; ইবনু মাজাহ, হা/৩৫৭৬।
৬. আবূ দাঊদ, হা/৪০৯৫; আহমাদ, হা/৬২২০; বায়হাক্বী, শুআবুল ঈমান, হা/৬১৩২; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২০৩০, সনদ ছহীহ।
৭. আবূ দাঊদ, হা/৪০৮৪।
৮. ছহীহ বুখারী, হা/৫৭৯০; ছহীহ মুসলিম, হা/২০৮৮।
৯. ছহীহ মুসলিম, হা/৯১; আবূ দাঊদ, হা/৪০৯২; আহমাদ, হা/৩৭৮৯।
১০. আবূ দাঊদ, হা/৪০৯৩; ইবনু মাজাহ, হা/৩৫৭৩।
১১. ছহীহ বুখারী, হা/৬৫৬১; ছহীহ মুসলিম, হা/২১৩।
১২. ফাতহুল বারী, ১০/২৬৯।
১৩. আবূ দাঊদ, হা/৬৩৭, ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২০৪১।
১৪. ছহীহ বুখারী, হা/৮০৯-৮১০; আবূ দাঊদ, হা/৮৮৯-৮৯০।
১৫. আবূ দাঊদ, হা/৪০৪০।
১৬. তিরমিযী, হা/১৭৮৩; নাসাঈ, হা/৫৩২৯; সনদ ছহীহ।
১৭. ছহীহ বুখারী, হা/৬০৬২; আবূ দাঊদ, হা/৪০৮৫; মিশকাত, হা/৪৩৬৯।
১৮. আবূ দাঊদ, হা/৪১১৭; মিশকাত, হা/৪৩৩৪, সনদ ছহীহ।
১৯. আবূ দাঊদ, হা/৩৮৩-৩৮৪; ইবনু মাজাহ, হা/৫৩১-৫৩৩; মিশকাত, হা/৫০৪, ৫১২।
২০. ছহীহ বুখারী, হা/৫৮৮৬; মিশকাত, হা/৪৪২৮।
২১. ছহীহুল জামে‘, হা/২২৩৪, সনদ ছহীহ।
